ঈদ عيد শব্দটি আরবী عود থেকে নির্গত। অর্থ হলো, বারবার আসা। যেহেতু এইদিন দুটি প্রতিবছর বারবার আসে, এজন্য এই দুইদিনকে ঈদ বলা হয়। عود থেকে নির্গত عيد নামকরণের আরো একটি কারণ হলো, এদিন আল্লাহ তায়ালা রহমত ও ক্ষমা নিয়ে বান্দার প্রতি অভিমুখী হন। (মাজাহেরে হক:২/২৭৭)
‘ঈদুল ফিতর’ শব্দ দুটিই আরবি, যার অর্থ হচ্ছে উৎসব, আনন্দ, খুশি, রোজা ভেঙে ফেলা ইত্যাদি। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা ও ইবাদত-বন্দেগীর পর বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ শাওয়াল মাসের চাঁদের আগমনে রোজা ভেঙে আল্লাহর বিশেষ শোকরিয়াস্বরূপ যে আনন্দ-উৎসব পালন করেন- শরীয়তের পরিভাষায় তাই ঈদুল ফিতর।
শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখকে ‘ঈদুল ফিতরের’ দিন বলা হয়। জিলহজ্ব মাসের দশম তারিখকে ‘ঈদুল আজহা’ বলা হয়। এই দুইদিনকে একত্রে ঈদাইন বলা হয়। এই দুইদিন শুকরিয়া স্বরূপ দুই রাকাত নামাজ আদায় করা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহ আলাইহির মতে ওয়াজিব। অন্যান্য ইমামদের নিকট সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
২০২৫ সালের ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ
প্রতিবছর সাধারণত সৌদি আরবের পরের দিন বাংলাদেশে ঈদ উদযাপিত হয়ে থাকে। তবে এই বছর পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এবার সৌদি আরব ও বাংলাদেশে একই দিনে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে।
তা শুধু নয়, বিশ্বের বেশিরভাগ মুসলিম দেশেও একই দিনে, অর্থাৎ আগামী সোমবার (৩১ মার্চ), ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পাকিস্তান স্পেস অ্যান্ড আপার অ্যাটমোস্ফিয়ার রিসার্চ কমিশন (সুপারকো) বুধবার (২৭ মার্চ) ঘোষণা করেছে যে, আগামী ২৯ মার্চ পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘোষণার পর, ৩০ মার্চ চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তা সাপেক্ষে ৩১ মার্চ (সোমবার) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হতে পারে।
চাঁদের অবস্থান, সূর্যের সঙ্গে এর কৌণিক বিভাজন, সূর্যাস্তের সময় উচ্চতা এবং বায়ুমণ্ডলীয় পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৩০ মার্চ চাঁদ দেখা যাবে। এর ফলে, এসব দেশে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সৌদি আরবে ২৯ মার্চ চাঁদ দেখা প্রায় অসম্ভব। কারণ, মক্কায় ওইদিন সূর্যাস্তের সময় চাঁদের বয়স মাত্র ৫ ঘণ্টা থাকবে। এ কারণে, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৩০ মার্চ চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে হিসেব অনুযায়ী, এসব দেশের মুসলমানরা ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর পালন করবেন। বাংলাদেশেও একই দিনে অর্থাৎ ৩১ মার্চ ঈদ উদযাপিত হতে পারে।
সৌদি আরবের মহাকাশ ও উচ্চ বায়ুমণ্ডল গবেষণা কমিশন (SUPARCO) জানিয়েছে, ২৯ মার্চ সৌদি আরবে চাঁদ দেখার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ওই দিন মক্কায় চাঁদের বয়স হবে মাত্র পাঁচ ঘণ্টা।
SUPARCO আরও জানিয়েছে যে, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ৩০ মার্চের বেশি।
৩০ মার্চ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে নবচন্দ্রের বয়স হবে ২৫ ঘণ্টা ১৬ মিনিট। যদিও এটি আকারে কিছুটা ছোট হবে, তবুও খালি চোখে দেখা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান এহসানুল হক জুবায়ের জানান, ২৯ মার্চ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় নবচন্দ্রের বয়স হবে মাত্র ১ ঘণ্টা ১৬ মিনিট, যা খালি চোখে বা টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা যাবে না। তবে ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় চাঁদের বয়স ২৫ ঘণ্টা ১৬ মিনিট হওয়ার পর সেটি খালি চোখে দৃশ্যমান হবে।
এরফলে, বাংলাদেশে ২৯ রোজা পালন এবং ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই দিনেই ঈদুল ফিতর পালনের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
শনিবার চাঁদ দেখা না গেলে, রমজান মাসটি ৩০ দিনেই সম্পূর্ণ হবে এবং ঈদুল ফিতর উদযাপন হবে ৩১ মার্চ, সোমবার।
অন্যদিকে, যদি শনিবার সন্ধ্যায় শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়, তাহলে সৌদি আরবে ৩০ মার্চ, রোববার অর্থাৎ পরদিনই ঈদুল ফিতর পালিত হবে।