নবীজির (সা.) ঈদ উদযাপনের সেরা দৃষ্টান্ত: যা আমাদের জন্য শিক্ষা

ঈদ ইসলামের অন্যতম প্রধান উৎসব, যা মুসলমানদের জন্য আনন্দ ও সৌহার্দ্যের প্রতীক। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঈদকে শুধু উৎসব হিসেবে নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষা হিসেবে দেখেছেন। তাঁর ঈদ উদযাপনের পদ্ধতি আমাদের জন্য একটি আদর্শ।

ঈদ عيد একটি ইসলামী পরিভাষা। এটি মুসলিম উম্মাহর বিশেষ ধর্মীয় উৎসব। ঈদ মুসলমানদের সংস্কৃতি- এ কথার আগে যুক্ত করে নিতে হবে, এটি ইসলামের দেয়া সংস্কৃতি। অতএব ইসলামী মূল্যবোধের আলোকেই একে বুঝতে হবে এবং দ্বীন ও শরীয়তের শেখানো পদ্ধতিতেই এর উদ্‌যাপন করতে হবে; নিজেদের মনগড়া ধ্যান-ধারণার আলোকে নয়, কিংবা শরীয়তের বিধিনিষেধ বিবর্জিত বস্তুবাদী ও ভোগবাদী মানসিকতা নিয়ে নয়।

ঈদ অর্থ কী?

ঈদ অর্থ আনন্দ। এর শাব্দিক অর্থ হলো ‘বারবার ফিরে আসা’ (عَادَيَعُوْدُعِيْدًا) এ দিনটি বারবার ফিরে আসে বলে এর নামকরণ হয়েছে ঈদ। আল্লাহ তা‘আলা এদিনে তার বান্দাকে নি‘আমাত ও অনুগ্রহ দ্বারা বারবার ধন্য করে থাকেন, বারবার ইহসান করেন। রমযানের পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন। ফিত্‌রা প্রদান ও গ্রহণ, হজ পালন ও কুরবানীর মাংস ভক্ষণ ইত্যাদি নি‘আমাত বছর ঘুরিয়ে তিনি বারবার বান্দাদেরকে ফিরিয়ে দেন। এতে মানুষের প্রাণে আনন্দের সঞ্চার হয়। এসব কারণে এ দিবসের নামকরণ হয়েছে ঈদ।

ঈদ কোন হিজরীতে শুরু হয়?

প্রথম হিজরীতেই ঈদ শুরু হয়। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র আগের নাবীদের সময় ঈদের প্রচলন ছিল না।

ঈদের প্রচলন কীভাবে শুরু হয়?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মাক্কা থেকে মাদ্বীনায় হিজরত করলেন তখন মাদ্বীনাবাসীদের মধ্যে বিশেষ দু’টি দিবস ছিল, সে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এ দু’টি দিনের তাৎপর্য কী? মাদ্বীনাবাসীরা উত্তর দিল আমরা জাহেলী যুগ থেকে এ দু’দিনে খেলাধুলা করে আসছি। তখন রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

قَدْ أَبْدَلَكُمُ اللهُ خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمُ الأَضَحٰى وَيَوْمُ الْفِطْرِ

আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন এ দু’দিনের পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম দু’টি দিন তোমাদেরকে দান করেছেন। আর সেই দিন দু’টি হল : ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (আবূ দাউদ : ১১৩৪; নাসাঈ : ১৫৫৬)

ইসলাম যে তার অনুসারীদের ধর্ম-কর্ম পালনের পাশাপাশি আনন্দ উদ্‌যাপনেরও সুযোগ দিয়েছে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন দুটি তারই এক বড় নিদর্শন। ঈদের দিন বৈধ পন্থায় আনন্দ উদ্‌যাপনের এই অবকাশ প্রসঙ্গেই আম্মাজান আয়েশা রা. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বর্ণনা করেছেন-  لَتَعْلَمُ يَهُودُ أَنَّ فِي دِينِنَا فُسْحَةً، إِنِّي أُرْسِلْتُ بِحَنِيفِيَّةٍ سَمْحَةٍ.
ইহুদিরা জানবে, আমাদের ধর্মেও অবকাশ আছে। নিশ্চয়ই আমি প্রেরিত হয়েছি এমন এক শরীয়ত নিয়ে, যা সহজতা ও উদারতার গুণে গুণান্বিত। মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৪৮৫৫

এই মহিমান্বিত দিনটিতে নবীজি (সা.)-এর কি কি সুন্নাহ ছিল তা আমরা জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

ঈদের আগের প্রস্তুতি: নবীজির (সা.) সুন্নত

ঈদের আগের রাতে নবীজি (সা.) বিশেষ কিছু আমল করতেন, যা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।

    • তাহাজ্জুদ নামাজ: ঈদের আগের রাতে তিনি অধিক ইবাদত করতেন।

    • গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: নবীজি (সা.) ঈদের দিনে ফজরের আগে গোসল করতেন, যা সুন্নত।

    • সুন্দর পোশাক পরিধান: তিনি ঈদের দিন পরিষ্কার ও সুন্দর পোশাক পরিধান করতেন।

    • ইতর ব্যবহার: সুগন্ধি ব্যবহার করাও তাঁর অভ্যাস ছিল।

ঈদের নামাজের জন্য মিসওয়াক করা ও গোসল করা সুন্নাত। ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন।(ইবনে মাজাহ, হাদিস:১৩১৫) 

অন্য হাদিসে বর্ণিত আছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।(মুয়াত্তা,হাদিস:৪২)

ঈদুল ফিতরের দিন বের হওয়ার আগে আহার করা।

ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা উত্তম। বুরাইদা (র.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না।’

মুহাম্মদ ইবনু আবদুর রাহীম (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক রিওয়াতে আনাস (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস:৯৫৩)

সাদকায়ে ফিতর আদায়

ইসলামের দৃষ্টিতে রমজানের শেষে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাফল্য লাভ করবে সে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, আর তার প্রতিপালকের নাম স্মরণ করে ও নামাজ কায়েম করে।’ (সুরা : আ‘লা, আয়াত : ১৪-১৫)

ইমাম ইবন কাসির (রহ.) উল্লেখ করেছেন, উমর ইবন আবদুল আজিজ (রহ.) মানুষকে ফিতরার জাকাত দিতে বলতেন এবং এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন।

ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটি ওয়াজিব।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫১২)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা দিয়েছেন : ‘ফিতরার জাকাত প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ওয়াজিব।’
(আল-হাকিম, সহিহ সনদ)

রমজান মাসের রোজার ভুলত্রুটি দূর করার জন্য ঈদের দিন অভাবী বা দুস্থদের কাছে অর্থ প্রদান করা হয়, যেটিকে ফিতরা বলা হয়ে থাকে। এটি প্রদান করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- ‘তুহরাতুল্লিস সায়িম’ অর্থাৎ এক মাস সিয়াম সাধনায় মুমিনের অনাকাঙ্ক্ষিত ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা হলো সাদকায়ে ফিতর।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সাদকাতুল ফিতর রোজাকে বেহুদা ও অশ্লীল কথাবার্তা ও আচরণ থেকে পবিত্র করার উদ্দেশ্যে এবং মিসকিনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য ফরজ করেছেন। যে ব্যক্তি তা (ঈদুল ফিতরের) নামাজের পরে পরিশোধ করে তা অন্যান্য সাধারণ দান-খয়রাতের অনুরূপ হিসাবে গণ্য। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)

ঈদের সালাতের আগে আমাদের করণীয় কী কী?

নিম্নবর্ণিত কাজগুলো করা সুন্নাত/মুস্তাহাব।

১. গোসল করা, পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব।

২. ঈদুল ফিতরের দিন খাবার খেয়ে ঈদের সালাতে যাওয়া, আর ঈদুল আযহার দিন না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। তাছাড়া ঈদুল আযহার সালাত শেষে কুরবানীর মাংস দিয়ে খাবার গ্রহণ করা সুন্নাত।

৩. ঈদগাহে পায়ে হেটে যাওয়া মুস্তাহাব। আর একপথে যাবে এবং ভিন্ন পথ দিয়ে আবার পায়ে হেটেই আসা সুন্নাত।

৪. তাকবীর পড়া এবং তা বেশি বেশি ও উচ্চস্বরে পড়া সুন্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর থেকে ঈদগাহ পর্যন্ত তাকবীর দিতে দিতে যেতেন। [১]

উল্লেখ্য যে, ফজরের সালাতের পর ঈদের সালাতের পূর্বে অন্য কোন নফল সালাত নেই।

[১] ঈদগাহের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়ে তাকবীর পাঠ শুরু করবে এবং ইমাম সাহেব সালাত শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতে থাকবে।

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেছেন, ঈদুল ফিতরের তাকবীর শুরু করবে ঈদের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকেই। ঈদের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর পাঠ করতেন।

ঈদের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী ধরনের পোশাক পরতেন?

আল্লামা ইবনু কাইয়িম (রহ.) তার সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ যাদুল মা‘আদে লিখেছেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। তাঁর এক জোড়া পোশাক ছিল যা দু’ ঈদ ও জুমু‘আর দিন পরিধান করতেন। অন্য এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

إِنَّ اللهَ تَعَالٰى يُحِبُّ أَنْ يَرى أَثَرَ نِعْمَتِهِ عَلٰى عَبْدِهِ

আল্লাহ রাববুল আলামীন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নি‘আমাতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন। (তিরমিযী : ২৮১৯)

পুরুষদের জন্য রেশমী কাপড় পরা হারাম। আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার বাজার থেকে একটি রেশমী কাপড়ের জুব্বা নিয়ে এলেন এবং রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা দিয়ে বললেন : (হে আল্লাহর রাসূল) আপনি এটি কিনে নিন। ঈদের সময় ও আগত গণ্যমান্য অতিথিদের সাথে সাক্ষাতের সময় এটা পরিধান করবেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

إِنَّمَا هٰذِهِ لِبَاسٌ مَنْ لاَخَلاَقَ لَهُ

‘এটা ঐ ব্যক্তির পোশাক যে আখিরাতে আল্লাহর কাছে কিছুই পাবে না।’ তাছাড়া বর্তমান সিল্ক হিসেবে যেসব কাপড় পাওয়া যায় সেগুলোও রেশমী কাপড়। (বুখারী : ৯৪৮)

ঈদগাহে কখন যাওয়া উত্তম?

ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া উচিৎ যাতে ইমাম সাহেবের কাছাকাছি বসা যায়, প্রথম কাতারে সালাত আদায় করা যায়। তাছাড়া সালাতের জন্য অপেক্ষা করা এসব অতীব সওয়াবের কাজ।

অপারগতা ও অক্ষমতা না থাকলে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর(রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) হেঁটে ঈদগাহে যেতেন এবং হেঁটে ঈদগাহ থেকে প্রত্যাগমন করতেন। (তিরমিজি, হাদিস:১২৯৫)

ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ভিন্ন রাস্তায় বাড়ি ফেরা সুন্নত। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)বলেন, নবীজি(সা.) ঈদের দিন ঈদগাহে আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করতেন।(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৮৬)

ঈদের সালাতে যাওয়া-আসায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’টি পথ ব্যবহার করতেন। একপথে যেতেন, ভিন্ন আর এক পথে বাড়ী ফিরতেন।

উলামায়ে কিরাম এ বিষয়ে বিভিন্ন হিকমাত বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ বলেছেন :

১. পথ ভিন্ন ভিন্ন হলে উভয় পথের লোকদের সালাম দেয়া যায় এবং ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়।

২. মুসলিমদের অবস্থা ও শান শওকত পর্যবেক্ষণ করতে পারা যায়।

৩. গাছপালা তরুলতা ও মাটি মুসল্লীদের পক্ষে স্বাক্ষী হয়ে থাকতে পারে।

ঈদের দিনে শুভেচ্ছা বিনিময়

ঈদের দিন কুশল বিনিময়ের ভাষার মধ্যেই এ বার্তা রয়েছে- تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَمِنْكُمْ. অর্থাৎ আল্লাহ কবুল করুন- রমজান মাসে ও আজকের দিনে করা আমাদের ও তোমাদের সমস্ত নেক আমল।

কুশল বিনিময়ের এই বাক্যটিই ইসলামের ঈদকে অন্যান্য ধর্মের উৎসব থেকে আলাদা করে দেয়। মুসলমানের ঈদ আশা ও ভয়ে মিশ্রিত এক সতর্ক ও সংযত আনন্দ উদ্‌যাপন। একদিকে খুশি- আলহামদুলিল্লাহ, রোজাগুলো রাখতে পেরেছি। অন্যদিকে শঙ্কা- কবুল হয়েছে তো! রমজান পেয়েও যদি মাগফিরাত নসীব না হয়, তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য তো কিছু নেই…। 

মাসব্যাপী ইবাদতের তাওফীক পেয়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং সেই খুশিতে তার বড়ত্ব বর্ণনা করে তাকবীর পাঠ, এটাই যে ঈদের মর্মকথা- নিম্নোক্ত আয়াতই তার প্রমাণ- وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللهَ عَلٰى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُون. এবং যাতে তোমরা রোযার সংখ্যা পূরণ করে নাও আর  আল্লাহ যে তোমাদের পথ দেখিয়েছেন, সেজন্য আল্লাহর তাকবীর পাঠ কর ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। সূরা বাকারা ১৮৫

ঈদের দিন একে অপরের সাথে দেখা হলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, জুবাইর বিন নুফাইর (রা.) বলেন,নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকুম অর্থাৎ আল্লাহ আমার ও আপনার যাবতীয় ভালো কাজ কবুল করুক।(ফাতহুল কাদির :২/৫১৭)

ঈদের সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহু (স.) বলেছেন, ‘যে আখেরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে।’ [সহিহ বুখারি : ৬১৩৮]

হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘যুবাইর ইবনে নফির থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময় সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন, (তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম) অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন। (ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারি ৬/২৩৯, আসসুনানুল কুবরা লিলবাইহাকী, হাদীস-৬৫২১)।

নবীজির (সা.) ঈদ উদযাপন থেকে আমাদের শিক্ষা

নবীজি (সা.)-এর ঈদ উদযাপন আমাদের জন্য একটি পরিপূর্ণ মডেল। তাঁর দৃষ্টান্ত থেকে আমরা যা শিখতে পারি:

    • ঈদ শুধু বিনোদন নয়, ইবাদতের একটি অংশ।

    • অসচ্ছল ও দুঃস্থদের ঈদের আনন্দে শরিক করা উচিত।

    • সংযম ও বিনয় বজায় রেখে ঈদ উদযাপন করা উচিত।

    • ঈদের দিন পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করা প্রয়োজন।

    • আনন্দ ও ইবাদতের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা উচিত।

ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও শিক্ষা অপরিসীম। প্রত্যেক মুসলমানের জীবনে ধর্মীয় করণীয়গুলো পালনের মাধ্যমে নিজেকে একজন প্রকৃত মুমিন মুসলমান হিসেবে তৈরি করা জরুরি। পরিশেষে কামনা প্রত্যেক রোজাদার ব্যক্তির রোজা, সাহরি, ইফতার, তারাবি, ইবাদত- বন্দেগি, দান-সাদকা মহান আল্লাহতায়ালা কবুল করুন। আমিন। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক।।

ঈদে ৯ দিনের বিরতি!

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ঈদ মানেই এক অন্যরকম আনন্দ। ২০২৫ সালের রোজার ঈদে মাত্র একদিন ছুটি ম্যানেজ করে পুরো ৯ দিনের ছুটি কাটানো সম্ভব! তবে কীভাবে এটি সম্ভব, সেটি নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এই লেখায়।

Read More

bd job portal

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *